Friday 15 April 2016

স্বর্ণ মুসুর

মা'র রান্নার স্বাদই আলাদা। ছোটবেলা থেকে মা'র হাতের নানারকমের নিরামিষ রান্নাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। এখনও যখন মা'র কাছে যাই আমার আবদারে আগেই হাজির হয়ে যায় বড়ি পোস্ত, কচুর শাক, মোচার ঘন্ট, লাউ চিংড়ি, মুসুর ডালের বড়ার তরকারি আরো অনেক কিছু। মুসুর ডালের বড়ার প্রতি দুর্বলতা আমার বরাবরই একটু বেশি। মা-কে দেখেছি আলু, বেগুন বা ঝিঙে দিয়ে ঝোল বা সরষে দিয়ে মুসুর ডালের বড়ার ঝাল করতে। ভাবছিলাম এই সাবেকি রান্নার সাথে নতুন কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব! ভাবতে ভাবতেই এই "স্বর্ণ মুসুর" এর আইডিয়া মাথায় এল।

খুব সহজ, চটপট হয়ে যাওয়া এই স্বর্ণ মুসুর সাবেকি এবং আধুনিক রান্নার দারুণ এক মেলবন্ধন। বাড়ির সব বয়সের সদস্যদের মন, স্বাদ এবং পেট ভরাতে একশ শতাংশ সফল হবে ইচ্ছে হেঁশেলের এই নতুন পদ স্বর্ণ মুসুর৷ তাই আজ ইচ্ছেহেঁশেলের ভালোবাসার আঁচে, সাধস্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরী হচ্ছে সাবেধুনিক (সাবেকি+আধুনিক) পদ স্বর্ণ মুসুর।

টুকটাক যা লাগবেঃ

i) মুসুর ডাল (৩৫০ গ্রম)
ii) পিঁয়াজ কুচি (১ টা)
iii) লঙ্কা কুচি (৪-৫ টা)
iv) ক্যাপসিকাম কুচি (১ টা)
v) গাজর কুচি (-১ টা)
vi) রসুন কুচি (৮-৯ কোয়া)
vii) আদা বাটা (১ চা-চামচ)
viii) পিঁয়াজ ডুমো করে কাটা (৪ টা)
ix) চেরা কাঁচা লঙ্কা (৪-৫ টা)
x) সাদা তেল
xi) নুন
xii) চিনি
xiii) টমেটো টমটম

রান্না শুরুঃ 

মুসুর ডাল ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখুন কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা।
ভেজানো মুসুর ডাল অল্প জল, নুন, একটু চিনি এবং কাঁচালঙ্কা দিয়ে মিক্সি বা শিলনোড়ায় বেটে নিন। বাটা ডাল ভালো করে ফেটিয়ে রেখে দিন। ডাল বাটার মধ্যে পিঁয়াজ কুচি এবং লঙ্কা কুচি মেশান।
কড়ায় সাদা টেল গরম হলে ছোট ছোট করে বড়া ভেজে তুলে রাখুন। এবার ঐ তেলেই প্রথমে রসুন কুচি তারপর ক্যাপসিকাম কুচি, ডুমো করে কাটা পিঁয়াজ, গাজর কুচি, চেরা কাঁচা লঙ্কা, আদা বাটা দিয়ে ভাজুন। একটু ভাজা হলে নুন, চিনি এবং বেশ খানিকটা (প্রায় এক কাপ) টমেটো টমটম মেশান। সব্জিগুলোর সাথে টমেটো টমটম মিশে গেলে ভাজা বড়া গুলো যোগ করে ভালো করে নাড়াচাড়া করে খানিকটা জল মিশিয়ে চাপা দিয়ে দিন। ৫ মিনিট হাই ফ্লেমে এবং আরো ৫ মিনিট লো ফ্লেমে রেখে মাখো মাখো হয়ে এলেই সাবেধুনিক পদ স্বর্ণ মুসুর ভোজনরসিকদের রসনাতৃপ্তির জন্য একেবারে তৈরী।

বিঃ দ্রঃ

i) মুসুর ডালটা আগেরদিন রাত্রে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। সারারাত ভিজলে ডাল বেশি নরম হয়।
ii) মুসুর ডাল বাটার মধ্যে যদি চান পিঁয়াজ ও লঙ্কা কুচির সাথে ডিম মেশাতে পারেন, ভালো লাগবে। তবে পিঁয়াজ কুচি বেশি দেবেন না। ডালের স্বাদ কমে যাবে।
iii) ডাল যত ফেটাবেন, বড়া তত ভালো হবে।
iv) টমেটো টমটমের বদলে অন্য যেকোন টমেটো সস ব্যবহার করতে পারেন।
v) এই রান্নার স্বাদের অনেকটাই নির্ভর করে টমেটো টমটমের ওপর। তাই কমপক্ষে এক কাপ টমেটো টমটম মেশাবেন। কিন্তু যদি টমেটো টমটমের স্বাদ ভালো না লাগে তাহলে কম দিতে পারেন। যাদের ভালো লাগে তারা এক কাপ দেওয়ার পর চেখে , যদি প্রয়োজন মনে হয় ,আরো খানিকটা দিতে পারেন।
vi) রান্নায় জলের ব্যবহার ভীষণ ইমপর্ট্যান্ট। জল না দিলে বড়ার মধ্যে গ্রেভির কোন স্বাদ ঢুকবে না এবং বড়া নরম ও হবে না।
vii) এই রান্নায় নিজের ইচ্ছেমত আরও সব্জি, যেমন বিনস, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, ধনেপাতা দিতে পারেন। চাইলে কোন সবজি না-ও দিতে পারেন। তবে পিঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, রসুন, আদা এবং কাঁচালঙ্কা ছাড়া "স্বর্ণ মুসুর" জমবে না।
viii) নুন, মিষ্টি, ঝাল এবং টমেটো টমটমের পরিমাণ নিজের এবং যারা খাবে তাদের পছন্দ অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারেন। 
গরম কালের একঘেয়ে রান্নার মধ্যে এই সাবেধুনিক পদ ছোট বড় মেজ সব ধরণের ভোজনরসিক বা ভোজনবেরসিকের পেট এবং মন ভরাবে আশা রাখি।

Wednesday 17 February 2016

ডিম-ডুম


রান্নাঘরে নুন চিনির হাজিরা যেমন আবশ্যক, আমার হেঁশেলে নুন চিনির সঙ্গে ডিম আর ময়দার উপস্থিতি একান্ত কাম্য। ব্যক্তিগতভাবে ডিম আমার খুব একটা পছন্দের তালিকায় না থাকলেও ভালবাসার মানুষগুলোর পাতে তাদের পছন্দের খাবার তুলে দিতে ডিমের জুড়ি মেলা ভার। ডিম-ময়দার জুটি বহুবারই ইচ্ছে হেঁশেলের মেনুতে ও কলমে ঠাঁই পেয়েছে । তাই ভাবলাম বিশেষ কিছু করা যাক। ভাজা ডিমের বদলে সেদ্ধ ডিমকে কাজে লাগানো যাক, নতুনত্ব আসবে আবার স্বাদকোরকের চাহিদাও চরিতার্থ হবে।
তাই আজ ইচ্ছেহেঁশেলের ভালোবাসার আঁচে স্বাদস্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরী হচ্ছে সেদ্ধ ডিমের এক নতুন পদ, "ডিম-ডুম"। চা, কফির সাথে দিব্যি জমে যাবে এই "ডিম-ডুম"।


টুকটাক যা লাগবেঃ

সেদ্ধ ডিম (৪টে)
পিঁয়াজ কুচি (৩টে, বড়)
ক্যাপসিকাম কুচি (১টা)
কাঁচালঙ্কা কুচি (যে যেমন ঝাল খান)
গোলমরিচ গুঁড়ো (১ টেবিল চামচ)
নারকেল কোড়া (২ টেবিল চামচ)
ময়দা (৪ কাপ)
সাদা তেল
নুন
টমেটো টমটম
চিনি ( স্বাদ মতন)
পাতিলেবুর রস (১ চামচ)


রান্না শুরুঃ 

ময়দার মধ্যে নুন, অল্প সাদা তেল মিশিয়ে ঈষদুষ্ণ গরম জল দিয়ে মেখে রেখে দিন।
সেদ্ধ ডিমগুলো টুকরো করে নিন। ননস্টিক প্যান বা ননস্টিক কড়াইতে সাদা তেল দিয়ে তার মধ্যে পিঁয়াজকুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, লঙ্কা কুচি, নুন, চিনি দিয়ে ভাজা হলে তার মধ্যে নারকেল কোড়া, , পাতিলেবুর রস,  গোলমরিচ গুঁড়ো আর সেদ্ধ ডিম কুচি দিয়ে ঢিম আঁচে হালকা হাতে মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
ময়দার লেচি কেটে মাঝারি মাপের রুটির আকারে বেলে নিন। এই রুটির ওপর এক চামচ টমেটো টমটম ভালো করে মাখিয়ে নিন। তারপর ২ চামচ সেদ্ধ ডিমের পুর দিয়ে চারপাশ থেকে মুড়িয়ে দিন। কড়ায় তেল ভালো করে গরম হলে, আঁচ কমিয়ে একটি একটি করে ডিম-ডুম ভেজে নিন।


গরম গরম ডিম-ডুমের প্রথম কামড়েই ডিমের কুসুমের মোলায়েম ভাব, টমেটো টমটমের চটকা, ক্যাপসিকাম, নারকেল, লঙ্কা, পিঁয়াজ, লেবুর রসের মিক্সড ফ্লেভার আর ময়দার ক্রাঞ্চ - খাদ্যরসিকদের স্বাদকোরকের চাহিদা চরিতার্থ করতে পুরোপুরি সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস। নতুন ধরণের রান্না নতুন ধরণের স্বাদ আপনার ভালবাসার মানুষদের শুধু যে রসনাতৃপ্তি ঘটাবে তাই নয়, মনও ভালো করে দেবে চটপট।

বিঃ দ্রঃ 

(i) ৪টে সেদ্ধ ডিমে মোটামুটি ৮টি ডিমডুম করা যাবে।
(ii) সেদ্ধ ডিম কাটার আগে ছুরিটা অল্প কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন এবং কাটার আগে ছুরির গায়ে অল্প তেল মাখিয়ে নেবেন, এতে সেদ্ধ ডিম কুচির প্রক্রিয়া সহজ এবং পরিচ্ছন্ন হবে।
(iii) যারা জোয়ানের স্বাদ পছন্দ করেন সেদ্ধ ডিমের পুর বানানোর সময় জোয়ান ফোড়ন দিতে পারেন, ভালো লাগবে।
ডিমের পুর বানানোর সময় সেদ্ধ ডিমকুচি একদম শেষে মেশাবেন, মেশানোর পর বেশী নাড়াচাড়া করবেন না, কুসুম ঘেঁটে যেতে পারে।
(iv) ডিমের পুর বানানোর সময় "ননস্টিক" প্যান বা কড়াই ব্যবহার করলেই ভালো। এতে মিশ্রণের প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং তলায় লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকেনা।
(v) টমেটো টমটম মজুত না থাকলে অন্য যেকোন টমেটো সস ব্যবহার করা যেতে পারে।
(vi) সেদ্ধ ডিমের পুর রুটি, লুচি, পরোটার সাথে খেতেও বেশ ভালো লাগে।


দো-দৈ মুরগি

এক একটা দিন এমন হয়, সেদিন মন - মাথা পুরো তেতো হয়ে থাকে। কেন হয়, কি জন্য হয় ছাতার মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। আজ তেমনই একটা দিন ছিল। সারাদ...