Monday 12 October 2015

ইচ্ছে বিরিয়ানি


কর্তার জন্মদিনে কি বিশেষ পদ রাঁধব ভাবতে ভাবতে যখন দিশেহারা তখন ভাবলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবারের লিস্টে সবচেয়ে প্রথমে যে পদ তা দিয়েই আমার প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন পালন করব। ভেবে তো নিলাম কিন্তু বানাবো কি করে? কখনো যে বিরিয়ানি বানাইইনি। শুরু হল ইন্টারনেট, রেসিপির বই ঘাঁটাঘাঁটি, বন্ধুবান্ধবদের কাছে পরামর্শ নেওয়া। এত চর্চার ফলে সবমিলিয়ে  ঘেঁটে আমি ঘ হয়ে গেলাম। তারপর ভাবলাম ধুত্তোর! গুলি মেরেছে সবকিছুর, নিজের ইচ্ছে মতই বানাবো "ইচ্ছে বিরিয়ানি"।

ইচ্ছে মত চলার ফল কখনোই খারাপ হয় না।  খেয়ে এবং দেখে সবাই অবাক, বলে "বানালি কি করে?"। যার উদ্দেশ্যে করা সে তো পাত শেষ করেই বলে "আর কোন রেস্তোরা নয় বিরিয়ানি খাব তো ইচ্ছে বিরিয়ানি!"
তাই আজ ইচ্ছে হেঁশেলের ভালোবাসার আঁচে, সাধস্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরী হচ্ছে আমার "ইচ্ছে বিরিয়ানি"।

ইচ্ছে বিরিয়ানির ধাপ অনেকগুলো। একে একে সবগুলোর বিবরণ দিচ্ছি।আশা করি সবার কাছে  পদ্ধতিটা পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে পারব। সময় সাপেক্ষ হলেও, খুব একটা কঠিন নয় "ইচ্ছে বিরিয়ানি"।

বিরিয়ানি মশলা 

একটা শুকনো খোলায় এলাচ (১০ গ্রাম), লবঙ্গ (১০ গ্রাম), দারুচিনি (১০ গ্রাম), সাদা জিরে (৫ গ্রাম), সাদা মরিচ (৫ গ্রাম), জয়িত্রি (৫ গ্রাম), জায়ফল (একটা ফলের ১/৪ ভাগ), তেজপাতা (১টা) আর শুকনো লঙ্কা (১টা) নেড়ে, মিক্সিতে পিষে নিলেই বিরিয়ানি মশলা তৈরি।

ক্ষীর  

৩ কাপ দুধ, ১ চামচ চিনি এবং ১ চিমটে নুন নিয়ে ফুটিয়ে এক কাপ ঘন ক্ষীর করে নিতে হবে।

বিরিয়ানির আলু এবং ডিম

যত জন খাবে সেইমত হিসেব করে আলু এবং ডিম দিতে হবে। আমি ৮-১০ জনের জন্য করেছিলাম। সেইরকমই হিসেব দিচ্ছি। ৪-৫টা বড় আলু নিয়ে খোসা ছারিয়ে  দু টুকরো করে  (আকারে ছোট হলে গোটা ৮-১০ টা দিতে পারেন) ধুয়ে সাদা তেলে ভেজে নেবেন। এরপর যা করতে হবে পরের ধাপে পেয়ে যাবেন। একইভাবে ৮-১০ টা ডিম নিয়ে সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে রেখে দেবেন।

বেরেস্তা বা ভাজা পিঁয়াজ 

বিরিয়ানির স্বাদবর্ধক হিসেবে বেরেস্তা বা ভাজা পিঁইয়াজ ব্যবহার করা হয়। ২টো বড় বা চারটে মাঝারি মাপের পিঁয়াজ মাঝখান থেকে লম্বালম্বি চিড়ে আড়াআড়ি পাতলা করে কেটে ফেলুন। এবার ছাঁকা তেলে বাদামি করে ভেজে তুলে রাখুন। পিঁয়াজ ভাজার সময় তেলে দু-চার দানা চিনি দিতে পারেন, রঙ ভালো হবে।

বিরিয়ানির মাংস

উপকরণঃ

(i) খাসির মাংস (১ কেজি, ১০ গ্রামের ১০ টুকরো),
(ii) পিঁয়াজ (১ কেজি, ৫০০ গ্রাম বাটা + ৫০০ গ্রাম কুচানো)
(iii) রসুন (১টা গোটা)
(iv) আদাবাটা (২ টেবিল চামচ)
(v) লঙ্কা বাটা (২ চামচ)
(vi) টক দই (১০০ গ্রা)
(vii) ধনে ও জিরে গুঁড়ো (১ টেবিল চামচ)
(viii) বিরিয়ানির মশলা (২ টেবিল চামচ)
(ix) কেওড়ার জল (২ টেবিল চামচ)
(x) মিঠা আতর (১ ফোঁটা)
(xi) নুন (স্বাদমতন)
(xii) দুধ (১ লিটার)
(xiii) চিনি (সামান্য)
(xiv) সাদা তেল (২ টেবিল চামচ)
(xv) সরষের তেল (১ চামচ)

রান্না শুরুঃ 

মাংস ধুয়ে  জল ঝরিয়ে পিঁয়াজ, রসুন, আদা লঙ্কাবাটা, টক দই, ধনে জিরে গুঁড়ো, নুন, চিনি এবং সরষের তেল দিয়ে মেখে কমপক্ষে আধঘন্টা রেখে দিন।কড়ায় সাদা তেল গরম করে তাতে পিঁয়াজকুচি দিয়ে ভেজে নিন। তারপর ম্যারিনেটেড মাংসটা মিশিয়ে কষাতে হবে। খানিকক্ষণ কষানোর পর বিরিয়ানি মশলা, কেওড়ার জল, ক্ষীর মিশিয়ে আবার কষাতে হবে। তেল ছেড়ে আসলে এক ফোঁটা মিঠা আতর আর ১ লিটার দুধ মিশিয়ে ফুটতে দিন। মাংস ফুটে উঠলে প্রেসার কুকারে ঢেলে এক কাপ জল মিশিয়ে দিন। প্রেসার কুকার হাই ফ্লেমে ১০ মিনিট এবং লো ফ্লেমে ২০ মিনিট বসালে মাংস ভালো সেদ্ধ হয়। মাংস সেদ্ধ হলে প্রেসার কুকার থেকে বের করে নিতে হবে। যে গ্রেভিটা রয়ে গেল তার মধ্যে ভেজে রাখা আলুগুলো দিয়ে ১০ - ১৫মিনিট ঢিম আঁচে রেখে দিলেই বিরিয়ানির আলু রেডি। এবার ঐ গ্রেভি থেকে বিরিয়ানির আলু বের করে নিয়ে আবার মাংসের টুকর গুলো ঢেলে দিয়ে গ্রেভিটাকে ফুটি য়ে মাখো মাখো করে নিলে বিরিয়ানির মাংসও রেডি।

বিরিয়ানির ভাত 

উপকরণঃ

(i) বিরিয়ানির চাল (১ কেজি)
(ii) এলাচ (৫টা)
(iii) দারুচিনি (২ টুকরো)
(iv) লবঙ্গ (৪-৫ টা)
(v) তেজপাতা (১টা)
(vi) ঘি (১ চামচ)
(vii) নুন (২ টেবিল চামচ)

রান্না শুরুঃ 

চাল ধুয়ে অন্তত আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে (আমি ১ ঘন্টা রেখেছিলাম)। একটা বড় ডেকচিতে জল গরম করতে দিতে হবে। জলের মধ্যে নুন, তেজপাতা এবং গোটা গরম মশলাগুলো একটু থেতো করে মিশিয়ে দিন। জল ফুটে উঠলে তার মধ্যে চাল দিয়ে ফুটতে দিন। চালগুলো লম্বা শেপে এসে গেলেই জলের মধ্যে ঘি মিশিয়ে ভাত উপুর দিয়ে দিন। এতে ভাত ঝরঝরে হবে।

মূল পর্ব 

মূল রান্নার মালমশলাঃ

(i) বিরিয়ানির ভাত
(ii) মাংস
(iii) আলু
(iv) ডিম
(v) বেরেস্তা
(vi) ক্ষীর
(vii) বিরিয়ানি মশলা
(viii) দুধে ভেজানো জাফরান (২ চামচ)
(ix) কেওড়ার জল (১ চামচ)
(x) মিঠা আতর (১ ফোঁটা)
(xi) ঘি (৩ টেবিল চামচ)

দম শুরুঃ 

বিরিয়ানির পাত্রটায় ভালো করে ঘি মাখিয়ে নিয়ে একদম নিচে আলু, ডিম ও মাংসের অর্ধেক দিয়ে দিন। এর ওপর একটা স্তর ভাত দিয়ে তার ওপর বেরেস্তা, এক চামচ ক্ষীর, এক চামচ বিরিয়ানি মশলা, এক চামচ ঘি, এক চামচ কেওড়া জল আর একটু জামরান মেশানো দুধ ছড়িয়ে দিন। তার ওপর বাকি আলু, ডিম, মাংস দিয়ে দিন। তার ওপর বাকি ভাত এবং একদম ওপরে অবশিষ্ট বেরেস্তা, দুধ জাফরান, এক চামচ বিরিয়ানি মশলা, এক চামচ ঘি ও এক ফোঁটা মিঠা আতর ছড়িয়ে দিন।

এবার পাত্রটাকে সরাসরি  আগুনের ওপর না বসিয়ে, সামান্য আকারে বড় আরেকটা পাত্রে জল ভরে তার মধ্যে বসান বা কোন তাওয়া ওপর বসাতে পারেন । এতে পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে না। বিরিয়ানির পাত্রটার ঢাকা যেন ভালোভাবে বন্ধ হয়। এই অবস্থায় আধ ঘন্টা মত ঢিম আঁচে বসিয়ে রাখলেই ইচ্ছে বিরিয়ানি তৈরী। (মাঝে মাঝে ঝাঁকিয়ে দিতে হবে।)

যাঁদের মাইক্রোওভেন আছে তাঁরা পরিবেশনের আগে ৫-৭ মিনিট মত গরম করে নিতে পারেন। এতে বিরিয়ানি ঝরঝরে হবে, খেতেও ভালো লাগবে। মাইক্রোওভেন না থাকলে দমেই বসিয়ে রাখুন পাতে দেওয়ার আগে অবধি।

বিঃ দ্রঃ

(i) বিরিয়ানি তৈরী সময় সাপেক্ষ, তাই ক্ষীর, বিরিয়ানি মশলা এগুলো আগে থেকে তৈরী করে রাখতে পারেন।
(ii)বাড়িতে ক্ষীর বানাতে না পারলে দোকান থেকে কেনা খোয়া ক্ষীরও ব্যবহার করতে পারেন।
(iii) কড়ায় বেশী করে সাদা তেল দিয়ে  প্রথমে বেরেস্তা বানিয়ে তারপর ঐ তেলেই বিরিয়ানির আলু ভেজে তুলে নিয়ে তেল কমিয়ে বিরিয়ানির মাংস রান্না করতে পারেন।
(iv) বিরিয়ানির ভাত যখন করবেন তখন অন্য কোন কাজ করবেন না। বরং ভাতের ফ্যান ঝরানোর জায়গা প্রস্তুত রাখবেন, ভাত খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।
(v) দুভাবে ফ্যান ঝরানো যেতে পারে - (ক) একটা খবরের কাগজ পেতে তার ওপর নোড়ার মত ভারী কিছু রেখে হাঁড়ি উল্টে ভাত উপুর দেওয়া, (খ) ঝাঁঝরি জাতীয় পাত্রে ভাত ঢেলে ফ্যান ঝরিয়ে নেওয়া।
(vi) ভাত তৈরীর সময় নুন এমন ভাবে দিতে হবে যাতে পরে আলাদা নুন না লাগে।
(vii) আমি ৮-১০ জনের খাবার মত হিসেব দিলাম।  লোক কমবেশী হলে মালমশলার পরিমাণও সেই অনুপাতে বদলাবে।
(viii) ইচ্ছে বিরিয়ানির সঙ্গে সাদাশাহী চিকেন জমে যায়।

এবার সবাই বাড়িতেই তৈরী করে ফেলুন রেস্তরাঁর স্বাদের "ইচ্ছে বিরিয়ানি"। সামনেই পুজো, ইচ্ছে বিরিয়ানি হয়ে যাক নবমীর স্পেশাল মেনু।


Wednesday 16 September 2015

মোগলাই স্যান্ডুইচ

আমার কর্তা মানুষটি খুবই ভোজনপ্রিয়, খাদ্যরসিক এবং সর্বভূক। তবে সর্বভূক হোলেও  খাবার পাতে মাছ বা মাংস বা ডিমের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। তারই জন্য সান্ধ্য জলখাবারে চিরাচরিত মুখচটকা খাবারের সামান্য হেরফের ঘটিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা সপ্তাহভোর ধরে চালিয়ে যাই।

আজ ইচ্ছেহেঁশেলের ভালোবাসার আঁচে সাধস্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেই সান্ধ্যভোজেরই একটি পদ যার নাম ' মোগলাই স্যান্ডুইচ '। খুব সহজে হাতের কাছে থাকা ক একটি উপকারণ দিয়েই তৈরি হয়ে যায় এই দারুম সুস্বাদু সান্ধ্যভোজ। বাড়ীতে বন্ধু-বান্ধ্যব বা আত্মীয়-স্বাজন এলে তাদের আপ্যায়নের পাতেও তুলে দেওয়া যেতেই পারে এই ' মোগলাই স্যান্ডুইচ'।


টুকটাক যা লাগবে (একটা মোগলাই স্যান্ডুইচের জন্য)

পরোটার জন্যঃ দুকাপ ময়দা , অল্প সাদা তেল, নুন।

বাকি রান্নার জন্যঃ
ডিম (১টা),
পিঁয়াজকুচি (১টা বড়),
রসুনকুচি (৩-৪ কোয়া),
লঙ্কাকুচি (২টো),
নুন (স্বাদ মতন),
গোলমরিচ গুঁড়ো (১/২ চা চামচ),
টমেটো টমটম (২ টেবিল চামচ)

রান্না শুরু

প্রথমে ময়দার মধ্যে অল্প নুন, খানিকটা তেল, জল দিয়ে ময়দা মাখুন। দুটো বড় লেচি কেটে মাঝারি মাপের খুব পাতলা না হয় এমন দুটো পরোটা বেলে রেখে দিন।

এবার একটা বাটিতে ডিম ফাটিয়ে তাতে পিঁয়াজ-রসুন কুচি, আদা বাটা, গোলমরিচ, লঙ্কাকুচি, নুন দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে রেখে দিন।

এবার ফ্রাইং প্যান বা চাটুতে সাদা তেল দুচামচ দিয়ে গরম হতে দিন। তেল গরম হলে তাতে একটা পরোটা রেখে তার ওপর ডিমের গোলাটা দিয়ে তার ওপর আরেকটা পরোটা দিয়ে উল্টে দিন। আরো দুচামচ তেল দিয়ে চেপে চেপে দুপিঠ  ভেজে নামিয়ে একটা ছুরি দিয়ে আড়াআড়ি এবং লম্বালম্বিভাবে টুকরো করে ফেলুন। প্রতিটা টুকরোর দু্দিকে পাঁউরুটিতে জ্যাম মাখানোর মত করে টমেটো টমটম মাখিয়ে, সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন মোগলাই স্যান্ডুইচ। খাটনি কম, স্বাদ বেশী এটাই মোগলাই স্যান্ডুইচের বিশেষত্ব।

বিঃ দ্রঃ 


  • ময়দা জলের বদলে দুধ দিয়ে মাখতে পারেন। স্বাদ বেশী ভালো হয়।
  • ডিমের গোলাটা যেন একটু ঘন হয়। প্রয়োজনে পিঁয়াজকুচির পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
  • চাইলে ডিমের গোলার মধ্যে ধনেপাতা, ক্যাপসি্কাম, বাঁধাকপি কুচি দিতে পারেন। তবে কুচিগুলো যেন খুব সূক্ষ্ম হয়। সোয়াবিন পেষ্টও দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পিঁয়াজ কমবেশী ইচ্ছেমত ব্যবহার করা যায়।
  • মুরগী বা খাসির মাংসের কিমা, একটু  লেবুর রস, নুন আর গোলমরিচ মাখিয়ে ভেজে নিয়েও ডিমের গোলার মধ্যে দেওয়া যেতে পারে। মোগলাই স্যন্ডুইচের স্বাদ আরো বাড়বে।
  • মোগলাই স্যান্ডুইচ সবসময় কেটেই পরিবেশন করবেন। এতে খাবার সুবিধে হয়।


Sunday 26 July 2015

টমেটো টমটম

আজকে ইচ্ছেহেঁসেলের রান্নাঘরে যে রান্নাটি হতে চলেছে সেটা আমার মা-র স্পেশাল রেসিপি। আমি তার নাম দিয়েছি টমেটো টমটম। মা-কে কখনও বাজার থেকে কিনে আনা টমেটো সস ব্যবহার করতে দেখিনি। বাড়িতেই খুব সহজে বানিয়ে ফেলত এই টমেটো টমটম আর এটা যে বাজারে পাওয়া যেকোন নামীদামী টমেটো সসকে স্বাদগন্ধে হারাতে পারে সে গ্যারান্টি নিশ্চিত।

কোন খাবারের সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল তার স্বাদ। আজকের ভেজালে ভরা শাকশব্জীর যুগে সবসময়েই পদের স্বাদ বাড়ানোর জন্য নির্ভর করতে হয় খুব মূল্যবান একটা ফলের ওপর যার নাম টমেটো। আমিষ হোক বা নিরামিষ যেকোন পদের স্বাদে চটকা আনতে টমেটোর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী।

কিন্তু টমেটোর যা দাম তাকে হেঁশেলে ঠাঁই দেওয়া মুশকিল। তাই শীতকালের বাজার থেকে সস্তায় কেনা টমেটোকে সারা বছর ব্যবহারের উপযোগী করে রাখা যায় তবে কেমন হয়?
তাই আজ ইচ্ছেহেঁশেলের ভালোবাসার আঁচে সাধস্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরী হচ্ছে আমার মা-র স্পেশাল টমেটো টমটম।

টুকটাক যা লাগবেঃ  

i) টমেটো (১ কেজি),
ii) চিনি (২০০ গ্রাম),
iii )নুন (১ চিমটে),
iv) সাদা ভিনিগার (১ কাপ),
v) তেঁতুলের পাল্প। (২০০ গ্রাম তেঁতুল জলে ভিজিয়ে তার পাল্প বের করলে যতটা হয়),
vi) কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো (২ চামচ)।

রান্না শুরুঃ 

গোটা টমেটো ধুয়ে পরিষ্কার করে প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে নিন। সেদ্ধ টমেটোগুলো মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেস্ট করে ছাঁকনিতে ভালো করে ছেঁকে নিন যাতে সমস্ত ছিবড়ে বেরিয়ে গিয়ে একট মসৃণ মিশ্রণ পাওয়া যায়।

এবার মিশ্রণটাকে কড়ায় চাপিয়ে এর মধ্যে একে একে চিনি, নুন, তেঁতুলের পাল্প মেশান। ২০ মিনিট ফোটার পর এতে এক কাপ ভিনিগার মিশিয়ে আরো ১০ মিনিট ফোটান। নামানোর আগে কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে নেড়ে আঁচ নিভিয়ে দিলেই টমেটো টমটম রেডি। সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা হলে শিশিতে ভরে রেখে দিন।

যখন তখন যেমন খুশি আমিষ বা নিরামিষ পদের স্বাদ বাড়াতে অথবা যেকোন ভাজাভুজির সাথে স্বাদে চটকা লাগাতে কেনা সসের পরিবর্তে ব্যবহার করুন আপনার নিজের হাতের তৈরী টমেটো টমটম আর সবাইকে চমকে দিন।

বিঃ দ্রঃ 

i) টমেটো সেদ্ধ করার জন্য প্রেসার কুকারের সিটি ওঠার দরকার নেই, স্টীম বসে গেলেই (পাতি বাংলায় ফিসফিস করলে) আঁচ বন্ধ করে দিন।
ii) টমেটোর পেস্ট ছাঁকবার জন্য মশারির মত জাল ব্যবহার করুন। এতে মিশ্রণটা মসৃণ হবে।
iii) চিনি এবং তেঁতুলের পাল্পের ব্যবহার স্বাদমতন কমিয়ে বা বাড়িয়ে নিতে পারেন।
iv) মিশ্রণটা ফোটার সময় চারদিকে খুব ছিটকোয়, তাই একটা চাপা দিয়ে দেবেন।
v) কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ব্যবহার করলে টমেটো টমটমের রঙ টকটকে হয়। ইচ্ছে হলে নাও ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে রঙ খুব একটা ভালো আসবে না।
vi) যে শিশিতে রাখবেন সেটা যেন একদম শুকনো এবং পরিষ্কার হয়। যদি কখনও চামচের ব্যবহার করতে হয় সেটিও যেন একদম পরিষ্কার আর শুকনো হয়।
vii) যারা বেশীদিনের জন্য বানিয়ে রাখতে চান তাঁরা খেয়াল রাখবেন, কিছুদিন যাওয়ার পর টমেটো টমটমের গন্ধের মধ্যে যদি কোন পরিবর্তন হয় তবে আবার একটু ফুটিয়ে নিয়ে ব্যবহার করুন।

Wednesday 24 June 2015

এক জোগাড় দুই পদঃ সাদাশাহী মুরগি ও দুধসাদা মিষ্টি

হাতে সময় খুব অল্প । বন্ধুরা আসবে, সবাই আড্ডা দেবে। তখন কি আর রান্নাঘরে থাকতে ইচ্ছে করবে? তাই চটপট একই জোগাড়ে দুটো পদ রেঁধে ফেললে কেমন হয়?

আমাদের সবার বাড়ীতেই আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা অতিথি আসলে আমাদের বাঙালি হেঁশেলের মেনুতে প্রধান যে দুটো খাবারের নাম থাকেই তা হল মাংস এবং মিষ্টি। মাংসের একটা বিশেষ পদ আর বিশেষ এক ধরনের মিষ্টি তৈরির উপকরণ গুলি এক হয় তাহলে হেঁশেলের কাজ চটজলদি মিটিয়ে তাড়াতাড়ি হুল্লোড়ে যোগ দেওয়া যায়।

আজ ইচ্ছে হেঁশেলের ভালবাসার আঁচে সাধ স্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরি  হচ্ছে সাদাশাহী মুরগি এবং দুধসাদা মিস্টি। এমন দুটি পদ যা খুব সহজ অনায়াসে বানিয়ে ফেলা যায় এবং অতিবড় নিন্দুকও এই রান্না খেয়ে প্রশংসা করতে বাধ্য হয়। আর নিজেরও চেখে মনে হয় "নাহ!!! রান্নাটা আমি ভালই করি ।"

বিশেষ জোগাড় যা দুটি পদেই লাগবে তা হলঃ

কাজু (৫০ গ্রাঃ)
কিশমিশ (৫০ গ্রাঃ)
চালমগজ (৫০ গ্রাঃ)
নারকোল কোরা (ইচ্ছে মতন, বেশি দিলে খেতে বেশি ভাল হবে)
দুধ (৫০০ মিলি)
ছোটো এলাচ দানা (৪-৫)
(মাপযোগে আমি বরাবরই খুব কাঁচা, পরিমাণ কম বেশি নিজেদের মতন করে নিতে পারেন, তবে দুটি পদের জন্য এই পরিমাণটাই সঠিক হবে বলে আমার মনে হয়।)

বিশেষ উপকরণের প্রস্তুতিঃ 

কাজু, কিসমিস, চালমগজ, নারকোল কোরা আর এলাচ দানা দুধের মধ্যে দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিতে হবে।  তারপর নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে দুধটা আলাদা করে দিয়ে মিক্সার গ্রাইণ্ডার বা শিল নোড়ায় বেটে নিতে হবে (খুব মিহি করে বাটবেন না)। ঐ বাটনা টা আবার দুধের সাথে মিশিয়ে খানিকক্ষণ ফুটিয়ে, নামিয়ে, দুভাগ করে রেখে দিতে হবে। এক ভাগ মাংসে আর এক ভাগ মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার হবে।

সাদাশাহী মুরগী

বিশেষ উপকরণ ছাড়াও আর যা টুকটাক লাগবে তা হলঃ
মুরগির মাংস (১ কেজি)
পিঁয়াজ কুচি (অনেকটা)
রসুন কুচি (বেশ খানিকটা)
আদা কুচি (রসুন কুচির থেকে একটু কম)
ধনে পাতা কুচি (ইচ্ছে মতন)
ক্যাপসিকাম কুচি (ইচ্ছে মতন)
কাঁচালঙ্কা কুচি (ইচ্ছে মতন)
টক দই (২০০ গ্রাঃ)
শুকনো লঙ্কা (৪-৫ টা)
ছোট এলাচ (৪-৫ টা)
লবঙ্গ (২-৩ টা)
দারচিনি (১ টা)
দুধ (এক কাপ)
নুন (যেমন খান)
চিনি (সামান্য)
সাদা তেল (বেশ খানিকটা)

রান্না শুরুঃ

পিঁয়াজ কুচি কিছুটা রেখে বাকি পিঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, আদা কুচি, লঙ্কা কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, ধনে পাতা কুচি একসাথে বেটে নিতে হবে।
এবার ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা মাংসে এই বাটনা, আগে করে রাখা বিশেষ বাটনা, টক দই, নুন, দুধ এবং সামান্য সাদা তেল দিয়ে মেখে কমপক্ষে আধ ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।

এবার কড়ায় সাদা তেল গরম করে তাতে বাকি পিঁয়াজ কুচি,শুকনো লঙ্কা, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, সামান্য চিনি ফোড়ন দিয়ে খানিকটা ভাজা হলে তার মধ্যে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে, ভাল করে মিশিয়ে চাপা দিয়ে দিতে হবে। এবার মাঝে মাঝে চাপা খুলে বেশ করে নেড়ে চেরে কসিয়ে আবার চাপা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে আবার কসাতে হবে। এইভাবে মাংস যখন সেদ্ধ হয়ে যাবে এবং গ্রেভি শুকনো হয়ে আসবে, তখন নামিয়ে নিতে হবে।

গরম গরম পরিবেশন করুন ঠোটের কোনে মিস্টি হাসি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ।

বি.দ্রঃ i) এই মাংসের পদটি শুকনোই ভাল লাগে। তবে কেউ যদি শুকনো খেতে ভাল না বাসেন তাহলে গ্রেভি তে আরও খানিকটা দুধ মিশিয়ে দিতে পারেন। জল মেশাবেন না,স্বাদ কমে যাবে।
ii) কাজু আর দুধ থাকে যেহেতু তাই চাপা দিয়ে আড্ডা দিতে চলে যাবেন না যেন, ধরে যাবে, মানে পুড়ে যেতে পারে। কিছুক্ষন পর পরই চাপা খুলে নাড়তে হবে যাতে পুড়ে না যায়।
iii) সাদাশাহী মুরগি সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে রুমালি রুটির সাথে, তাই যেদিন এটা বানাবেন সেদিন রুমালি রুটির আয়োজন রাখলে জমে যাবে। রুমালি ছাড়াও যে কোনো ধরনের রুটি,পরোটার সাথে ভাল লাগবে। তবে আমার কত্তার মতে ভাতের পাতেও দারুণ জমে সাদাশাহী মুরগি।
iv) একই ভাবে পাঁঠার মাংস দিয়েও ভাল হবে সাদাশাহী রান্না। ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক অ্যাসিড এবং কোলেস্ট্রল বেশি বন্ধুদের  মুরগিতেই থাকতে আনুরোধ করব কারন রান্নাটা এমনিতেই খুব রিচ হয়। 

দুধসাদা মিষ্টি

বিশেষ জোগাড় ছাড়াও আরো টুকটাক যা লাগবেঃ
দুধ (১ লিটার)
কাজুকুচি (অল্প)
কিশমিশ কুচি (অল্প)
খেজুর কুচি (অল্প)
চিনি (স্বাদমতন)
কনডেন্সড মিল্ক (ইচ্ছেমতন)
নুন (১ চিমটে)

রান্না শুরুঃ 

দুধের মধ্যে অল্প চিনি আর এক চিমটে নুন দিয়ে ফুটতে দিতে হবে। দুধ ফুটে উঠলে তার মধ্যে বিশেষ বাটনাটি মিশিয়ে আবার ভালো করে ফুটতে দিতে হবে। যখন দুধ ঘন হয়ে আসবে তখন কনডেন্সড মিল্ক মিশিয়ে আরো বেশ খানিকক্ষণ ফোটাতে হবে। দুধ, বিশেষ বাটনা আর কনডেন্সড মিল্ক মিলেমিশে একাকার হয়ে খুব ঘন হয়ে এলে নামিয়ে কিছুটা ঠাণ্ডা করে তার ওপর কাজুকুচি, কিশমিশ কুচি এবং খেজুর কুচি ছড়িয়ে ফ্রিজে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে (ডিপ ফ্রিজে নয়)।

ঠণ্ডা ঠাণ্ডা দুধসাদা মিষ্টি পরিবেশন করে সবার মন ও মেজাজ মিষ্টি করে দিন।

বিঃ দ্রঃ i) বিশেষ মিশ্রণে কিশমিশ ও কনডেন্সড মিল্ক থাকায় পদটি যথেষ্ট মিষ্টি হবে। হালকা মিষ্টি পছন্দ করলে চিনি ব্যবহার নাও করতে পারেন।
ii) মিষ্টির ওপরে কাজু, কিশমিশ এবং খেজুরকুচির বদলে আপনারা আপনাদের ইচ্ছেমতন অন্যকিছু যেমন চকোলেট চিপস, পেস্তাকুচি, আমন্ডকুচি ইত্যাদি দিতে পারেন।
iii) এটা যেদিন বানিয়েছিলাম, ফ্রিজ থেকে বের করার পরই বন্ধুরা আমার রাঁধুনিসত্ত্বার মধ্যে যে ফটোগ্রাফার সত্ত্বা আছে তার বিকাশ ঘটতে দেবার কোন সুযোগ না দিয়েই হামলা চালিয়েছিল। তাই খুবই দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে এই মিষ্টির ছবি আমি দিতে পারলাম না।   

Tuesday 16 June 2015

ডিমের মোড়ক

ময়দা আর ডিম এমন উপকরণ যা সকলের হেঁসেলেই মজুত থাকে। এই দুটো সোজা সাপটা উপকরণ দিয়ে কত শত জিভে জল আনা মুখরোচকপদ বানানো যায় সেটা এদের দেখে বোঝা মুশকিল। এরকমই খুব সহজ অথচ একটা খেলে আরো দুটো খেতে ইচ্ছে করে এমন একটা রেসিপি হল ডিমের মোড়ক।

টুকটাক যা চাইঃ 

পুরের জন্যঃ

ডিম (য'টা খুশি)
পিঁয়াজকুচি (অনেকটা)
রসুনকুচি (বেশ খানিকটা)
আদা কুচি (বেশ খানিকটা)
কাঁচালঙ্কা কুচি (ইচ্ছেমতন)
বাঁধাকপি কুচি (অল্প)
সেদ্ধ সোয়াবিন বড়ি কুচানো (অল্প)
নুন (স্বাদ মতন)
চিনি (সামান্য)
দুধ (অল্প)
টমেটো সস (বেশ খানিকটা)
সাদা তেল (বেশ খানিকটা)


মোড়কের জন্যঃ 

ময়দা, নুন, তেল (ইচ্ছেমতন)

রান্না শুরুঃ 


প্রথমে একটা জায়গায় ডিম ফাটিয়ে তাতে পিঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, লঙ্কাকুচি, বাঁধাকপি কুচি, আদাকুচি, সোয়াবড়িকুচি, নুন, চিনি, দুধ ভালো করে মিসিয়ে ফেটিয়ে রাখতে হবে। এর পর করায় বা ফ্রাইং প্যানে বেশ খানিকটা সাদা তেল গরম করে তাতে ডিমের মিশ্রণটা দিয়ে ভালো করে ঝুরঝুরে করে (ডিম ভুজিয়ার মত করে) ভেজে নিতে হবে। ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে বেশ খানিকটা টমেটো সস মিশিয়ে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে।


এইবার মোড়কের জন্য, লুচি বানানোর জন্য যেমন ময়দা মাখা হয়, ঠিক তেমন ভাবে ময়দাতে সাদা তেল, নুন ও জল দিয়ে মেখে ছোট ছোট লেচি কেটে নিয়ে বেলে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন বেশ পাতলা হয়। এবার ওর মধ্যে ডিমের পুর দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতন আকারে মুড়ে, সাদা তেলে ভালো করে ভেজে নিতে হবে।
গরম গরম পরিবেশন করুন হাসিমুখে টমেটো সসের সাথে। :)

বিঃ দ্রঃ বাঁধাকপি এবং সোয়াবিন সেদ্ধ চাইলে না-ও দিতে পারেন। আমার ভালো লাগে তাই দিয়েছিলাম একটু স্বাস্থ্যকর বানানোর প্রচেষ্টায়।
একইভাবে আপনারা মাংস, মাছ বা যেকোন মিক্সড ভেজ দিয়েও এই পদটি বানাতে পারেন।
অবশ্যই বানাবেন, খাবেন এবং জানাবেন ইচ্ছে হেঁসেলের এই প্রথম ইচ্ছে রান্না কেমন লাগল। :)

দো-দৈ মুরগি

এক একটা দিন এমন হয়, সেদিন মন - মাথা পুরো তেতো হয়ে থাকে। কেন হয়, কি জন্য হয় ছাতার মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। আজ তেমনই একটা দিন ছিল। সারাদ...